ক্রোমোজোম হচ্ছে বংশগতির প্রধান উপাদান। ক্রোমাটিন তন্তু কোষ বিভাজনের প্রোফেজ দশায় দণ্ডাকার গঠনে রূপান্তরিত হয়ে ক্রোমোজোমে পরিণত হয় যা জীবের সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং এর মাধ্যমেই বৈশিষ্ট্যসমূহ বংশ পরস্পরায় সঞ্চারিত হয়।
চিত্র: আদর্শ বা ইউক্যারিয়টিক ক্রোমোজোম |
সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী স্ট্রাসবার্গার ১৮৭৫ সালে ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন।তারপর বিজ্ঞানী ওয়ালডেয়ার ১৮৮৮ সালে প্রোফেজ দশায় প্রাপ্ত দণ্ডাকার গঠনের ক্রোমাটিনের নাম দেন ক্রোমোজোম। ১৯৩৩ সালে বিজ্ঞানী বোভেরি প্রমাণ করেন যে ক্রোমোজোমই বংশগতির ধারক ও বাহক ।
একটি আদর্শ ক্রোমোজোম এর অংশগুলি হলো
ক্রোমাটিড :প্রতিটি ক্রোমোজোম দৈর্ঘ্য বরাবর দুটি সূক্ষ্ম সুতোর মতো অংশ নিয়ে গঠিত। এই সুতোর মতো অংশগুলোই ক্রোমাটিড নামে পরিচিত।কোষ বিভাজনের সময় প্রতিটি ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড সৃষ্টি করে।ক্রোমোনিমাটা:
কোষ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশায় ক্রোমোজোম এর মধ্যে দুটি সূক্ষ্ম তন্তু থাকে । এই সূক্ষ্ম তন্তু সদৃশ অংশ ক্রোমোনেমাটা নামে পরিচিত।আসলে প্রতিটি ক্রোমোনিমা তন্তু কুণ্ডলী কৃত ঘনীভূত হয়ে মেটাফেজ দশায় এক একটি ক্রোমাটিড গঠন করে। ক্রোমাটিড ও ক্রোমোনিমাটা একই সংগঠনের ভিন্ন ভিন্ন দশার দুটির নাম মাত্র।ক্রোমোনিমার রাসায়নিক পদার্থের ঘনত্ব একই রকম নয়। স্থানে স্থানে এর ঘনত্ব খুব বেশি হয়। এই অধিক ঘনত্ব যুক্ত পুতির মত অংশগুলোকে ক্রোমোমিয়ার বলে।দুটি ক্রোমোমিয়ার এর অন্তর্বর্তী হালকা অংশকে আন্ত: ক্রোমোমিয়ার বলে।
প্রাথমিক খাজ বা সেন্ট্রোমিয়ার:
ক্রোমোজোমের মাঝ বরাবর স্থানে একটি খাজ থাকে যা প্রাথমিক খাজ নামে পরিচিত। প্রাথমিক খাজে যে ঘন ও অরঞ্জিত অংশটি থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে। সেন্ট্রোমিয়ার এর দু পাশের ক্রোমোজোমের অংশকে ক্রোমোজোম বাহু বলে। সেন্ট্রোমিয়ার এর সঙ্গে যুক্ত প্রোটিন নির্মিত প্লেট এর আকৃতির দুটি অংশ থাকে যা কাইনেটোকোর নামে পরিচিত। ক্রোমোজোমের দুটি ক্রোমাটিড এ দুটি কাইনেটোকোর থাকে। কাইনেটোকোর দুটি প্রায় চল্লিশটি অনুনালিকা দ্বারা যুক্ত থাকে।আরও দেখ | কোশ চক্রের S দশাকে সংশ্লেষ দশা বলা হয় বাক্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো | কোশ বিভাজনের দশাকে সংশ্লেষ দশা বলা হয় কেন
সেন্ট্রোমিয়ার এর অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোম চার রকমের হয়।
- টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম : সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের শেষপ্রান্তে থাকে।
- অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম : সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তের নিকটে থাকে।
- মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম : সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের মাঝখানে থাকে।
- সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম: সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের মাঝখানের নিকটে থাকে।
গৌণ খাজ:
ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজ ছাড়া ক্রোমোজোমের অপর কোন খাজ থাকলে তাকে গৌণ খাজ বলা হয়।নিউক্লিওলার অর্গানাইজার:
ইন্টারফেজ দশায় এই অঞ্চলটি নিউক্লিয়াস এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। টেলোফেজ দশায় এই অঞ্চলের DNA নিউক্লিওলাস গঠন করে।এই কারণে গৌণ খাজকে নিউক্লিওলার অর্গানাইজার বলে।