মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় কেন?
পৃথিবীর সর্বত্র বায়ু প্রবাহিত হলেও কেবল উদ্ভিদশূন্য মরু | অঞ্চল বা মরুপ্রায় অঞ্চলে বায়ুর কার্য সর্বাধিক লক্ষ করা যায়। শুষ্ক মরু অঞ্চলে বায়ুর কার্য ব্যাপকভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে এবং বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।মরু ও মরুপ্রায় অঞলে বায়ুর কার্য সর্বাধিক হওয়ার কারণ নিম্নরূপ।
চিত্র: থার্ড পার্টি চিত্র রেফারেন্স |
এই কারণে বৃষ্টিহীন মরু অঞ্চলে নানারকম ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
মরু অঞ্চলের চরমভাবাপন্ন জলবায়ু : মরু অঞ্চলে দিন ও রাত্রি এবং শীত ও গ্রীষ্মের উয়তার পার্থক্য অত্যন্ত বেশি হওয়ার জন্য উয়তার পরিবর্তনে শিলায় প্রসারণ ও সংকোচন বেশি হয়, ফলে শিলা সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বালিতে পরিণত হয়।
যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাবল্য : মরু অঞ্চলের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন।এর জন্য শিলা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে টুকরাে টুকরাে খণ্ডে ভেঙে পরে বালিকণায় পরিণত হয়।
উদ্ভিদহীন অঞ্চল : মরু অঞ্চলে গাছপালা না থাকার কারণে গাছপালার শিকড়ের মৃত্তিকাকে আঁকড়ে ধরে রাখার সুযােগ নেই।ফলে মৃত্তিকা ও বালি শিথিল হয়ে আলগা ধুলাের মতাে পড়ে থাকে। বায়ুপ্রবাহ তখন সহজেই শিথিল মৃত্তিকা ও বালিকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
বালির সঙ্গে শিলার ঘর্ষণ : প্রবল বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বালিরাশি উড়ে এসে বিভিন্ন শিলার ওপর ঘর্ষণ সৃষ্টি করে, এর ফলে শিলা ক্ষয় পেয়ে বালিকণায় পরিণত হয় এবং ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
কিভাবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন সুন্দরবনকে প্রভাবিত করছে?
সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রতি দশকে বাড়ছে ০.৫ সেলসিয়াস করে৷ গত ২০/৩০ বছরে সুন্দরবনে জলস্তর বেড়েছে আন্তর্জাতিক গড়ের দ্বিগুণ৷ বৃষ্টিপাত ও সাইক্লোনের চরিত্র বদলে গেছে৷ সুন্দরবন এলাকার ৭০% মানুষ কৃষিজীবী৷- সমুদ্রের জলস্তর বাড়ায় প্রচুর পরিমাণ নোনাজল ঢুকে গিয়ে কৃষিজমির সর্বনাশ করছে৷
- তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূমিক্ষয়৷ গত এক দশকে ভূমিক্ষয়ের হার বেড়েছে দ্বিগুণ৷
- জলবায়ু পরিবর্তনে সুন্দরবনের নদী ও খাঁড়িতে মাছের পরিমাণও কমে গেছে৷
- রুজিরোজগারের সঙ্কটে সেখানকার মানুষজনদের নাভিশ্বাস৷
সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম সংমিশ্রিত ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং এটি একটি মনোনীত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান । ভারত এবং বাংলাদেশ ভাগ করে নিয়ে এটি বাঘ সহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির বাসস্থান। এটি প্রায় ৪৩.৩ মিলিয়ন মানুষ এর আবাসভূমি। পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে সুন্দরবন ৪.১৫ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
- সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বীপপুঞ্জগুলি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে এবং জল এবং মাটিতে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের স্বাস্থ্যের এবং মাটি ও ফসলের গুণগতমানকে মারাত্মকভাবে হুমকির মধ্যে ফেলেছে।
- জলবিদ্যুত উৎপাদন এবং মৎস শিকারের ধরণগুলিতে পরিবর্তনজনিত মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটেছে যার ফলস্বরূপ জেলেদের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ঘটেছে।
- ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় এবং অনাবৃত মৌসুমী বৃষ্টির প্যাটার্ন পরিবেশ ও মানবতার ক্ষতি করে।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কি?
জল সংগ্রহ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বৃষ্টির জল আপনার বাড়ির জন্য একটি নবীকরণ যোগ্য, টেকসই এবং একটি উচ্চ মানের জলের উৎস।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আমরা আগের তুলনায় বেশি জল সংকট সমস্যার মুখোমুখি। এই সমস্যাটি এড়াতে আমাদের বৃষ্টিপাতের জল সংরক্ষণ বা সংগ্রহ করা উচিত যা কোনও ব্যবহার ছাড়াই সমুদ্রের জলে মিশ্রিত হচ্ছে।
বৃষ্টিপাতের জল সংগ্রহের অনুশীলন প্রায় হাজার বছর ধরে চলছে এবং বর্তমানে আমাদের সমাজেও সর্বত্রই এটি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
ভারতে, তামিলনাড়ু প্রথম রাজ্য যা ভূগর্ভস্থ জলের হ্রাস এড়াতে প্রতিটি বিল্ডিংয়ের জন্য বৃষ্টির জল সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করে। এটি 5 বছরের মধ্যে দুর্দান্ত ফলাফল দিয়েছে এবং ধীরে ধীরে প্রতিটি রাজ্য এটিকে রোল মডেল হিসাবে গ্রহণ করেছে। এর প্রয়োগের পর থেকে, চেন্নাই যা জল সংকটজনিত শহর হিসাবে পরিচিত ছিল সেখানে পাঁচ বছরে জলের স্তর 50% বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং জলের গুণমান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি লাভ করে।
যেহেতু বৃষ্টির জল সরাসরি বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত হয়, তাই প্রায়শই এটি পরিশোধন ছাড়াই পান করার উপযুক্ত বলে মনে করা হয় না। এটিতে কিছু দ্রবীভূত দূষক থাকতে পারে।
বৃষ্টির জল সংগ্রহের সুবিধাগুলি হ'ল,
- ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধি করে।
- বন্যার সম্ভাবনা এবং মাটি ক্ষয়ের পরিমাণ হ্রাস করে।
- নিখরচায় একটি মূল্যবান সংস্থান ব্যবহার করা ।
- গাছের বৃদ্ধি উন্নতি করতে পারে।
- জলের বিল হ্রাস করে।
এল নিনো ও লা লিনো কিভাবে ভারতের মৌসুমী বায়ুকে প্রভাবিত করে?
ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রক হল মৌসুমি বায়ু। ভারত থেকে বহুদূরে পেরু ও চিলির প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে ব্যতিক্রমী উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত রূপে যথাক্রমে এল লিনো ও লা লিনো মৌসুমি বায়ুকে প্রভাবিত করে। তাই বলা যায়, এল নিনাে ও লা নিনা পরােক্ষভাবে ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে।ভারতের জলবায়ুতেভারতের জলবায়ুর উপর এল লিনো প্রভাব :
এল নিনাে যে বছর প্রবাহিত হয় সেই বছর পেরু চিলি ও ইকুয়েডর উপকূলের সমুদ্রের ওপর গভীর নিম্নচাপ তৈরি হয়। এর ফলে পুবালি জেটবায়ুর প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকেও প্রভাবিত করে।এল লিনো চলাকালীন ভারতের জলবায়ুতে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি লক্ষ করা যায়
- ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে
- মৌসুমি বায়ু ভারতে প্রবেশ করতে দেরি করে
- দুর্বল মৌসুমি বায়ুর দ্বারা কম পরিমাণে ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
- ভারতের পশ্চিমাংশের রাজ্যগুলিতে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ভারতের জলবায়ুর উপর লা লিনোর প্রভাব :
পেরু ও চিলি উপকূলে সৃষ্ট স্বাভাবিকের চেয়ে 4° c কম উম্নতাবিশিষ্ট এই শীতল সমুদ্রস্রোত 6 মাস থেকে 2 বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।ভারতের জলবায়ুতে লা লিনোর র নিম্নলিখিত প্রভাব লক্ষ করা যায়-
- লা লিনো চলাকালীন ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
- দেশের অনেকাংশে অধিক বৃষ্টিপাতজনিত কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
- বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বেড়ে যায়।
- শীতকালে উত্তর ভারতে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।